জীবনে সবাই বড় হতে চায়। ধনী হওয়ার স্বপ্ন থাকে। সে বাসনা চাকরি দিয়ে খুব কমই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। এর জন্য দরকার ব্যবসা।

বলা হয়ে থাকে, ব্যবসায় দশ দিক থেকে আয় করা যায় আবার সে অর্থ মনের মতো করে খরচ করা যায়, যা চাকরি দিয়ে মেলে না। পৃথিবীতে যত শীর্ষ ধনী আছেন, তাঁদের একজনও চাকরিজীবী নন, সবাই ব্যবসায়ী। কিন্তু সে ব্যবসা কি সবাই করতে পারে? মোটেও না। ব্যবসার জন্য ২৪ ঘণ্টাই সজাগ ও সচল থাকতে হয়। ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম বলেছেন, ‘স্বপ্ন সেটা নয়, যেটা মানুষ ঘুমিয়ে দেখে, বরং সেটাই স্বপ্ন, যেটা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না। ’ প্রকৃত ব্যবসায়ীর জীবনে এই বাক্যের বাস্তবায়ন আদ্যোপান্ত ঘটে থাকে।
ব্যবসা মানেই উদ্যোক্তা। আর উদ্যোক্তা হয়েই তো কেউ জন্মায় না। অনেকে হয়তো কখনো ভাবেওনি যে সে ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হবে। কিন্তু মনের গহিনে জন্মানো স্বপ্ন তাকে সেদিকে নিয়ে যায়। সেই চলার পথ যে অনেক বন্ধুর। মাথায় রাখতে হয় দশ দিগন্তের রোডম্যাপ। খুলতে হয় অনেক হিসাব-নিকাশের খাতা। না হলে মাঝপথে হোঁচট খেয়ে বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কাটা প্রবল।

কী কী বিষয় একজন উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীর জন্য মনে রাখাটা জরুরি। জরুরি বিষয়গুলোর মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় পরিকল্পনার কথা। সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে কী ব্যবসা, কোথায়, কিভাবে করা যায় তা নিয়ে। ব্যবসায় নামার আগেই সে বিষয়ে বারবার গবেষণা বা বিশ্লেষণ করতে হবে। বাজারে লাভবান হওয়া যাবে কি না, তা মাথায় রাখতে হবে। কিভাবে নিজের সেবাকে সহজে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়া যায়, তা নিয়েও ভাবতে হবে বিচক্ষণতার সঙ্গে।

বাজারে আরো অনেকেই থাকবে আপনার প্রতিযোগী হয়ে। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় কতটা টিকতে পারবেন, তা মাঠে নামার আগেই চিন্তা করাটা জরুরি। বলা হয়ে থাকে, ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। ’ ব্যবসাটা যেহেতু কোনো ছেলে খেলা নয়, তাই প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেদের একটু অন্যভাবে উপস্থাপন করতে হবে। কথায় আছে, ‘জ্ঞানীরা একই কাজ ভিন্নভাবে করে। ’ আর সেটা করতে পারলেই সফলতাটা দ্রুত ধরা যায়।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যোগ্য জনবল নিয়োগ দেওয়া। ব্যাবসায়িক কর্মকাণ্ডের জন্য জনবল প্রয়োজন হলে পারিশ্রমিক একটু বেশি দিয়ে হলেও যোগ্য ও দক্ষ জনবল নিয়োগ দিতে হবে। কারণ মাঠে সেবার সঙ্গে তাদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা থাকে। সেই সঙ্গে সততার ব্যাপারে কোনো কার্পণ্য করা যাবে না। সততা সফলতার মূলমন্ত্র। এই গুণটি না থাকলে ব্যবসায় হাত বাড়ানোই বোকামি।

এত কিছু ভাবনার পরও হয়তো মাঝেমধ্যে হোঁচট খাবেন। কিন্তু তাতে ভেঙে পড়া যাবে না। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘নেভার গিভ আপ। ’ কখনো হাল ছাড়া যাবে না। দিন-রাত পরিশ্রমের পরও ফলাফলটা শুরুর দিকে তেমন আসবে না; কিন্তু তার পরও হাল ছাড়া যাবে না। নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। ভারসাম্যপূর্ণ মেজাজ তৈরি করতে হবে।

ব্যবসায় লাভ করতে হলে আপনাকে ঝুঁকি গ্রহণ করতেই হবে। যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের সমস্যা সামনে এলে তা শক্ত হাতে মোকাবেলা করার ঝুঁকি নিতে হবে। টাকা বগলদাবা করে তো আর ব্যবসায় লাভ করা যাবে না। তাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে।

গ্রাহকদের মনোভাব বুঝে তাদের তুষ্টির জন্য মাঝেমধ্যে কিছু বিশেষ অফারের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্য সবার চেয়ে একটু আলাদা হতে গেলে ব্যতিক্রমধর্মী কিছু কৌশল অবলম্বন করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর হিসাব-নিকাশে কখনো খামখেয়ালি করা যাবে না। প্রতিদিন, প্রতিক্ষণের হিসাব সুচারুভাবে রাখতে হবে। ধৈর্যের সঙ্গে হিসাব-নিকাশ না রাখতে পারলে সব গুলিয়ে যাবে।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিজেকে সৃষ্টিশীল হিসেবে প্রকাশ করা। গ্রাহকের চাহিদা তৈরি করে সেই সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ করা যায়। এর জন্য দরকার দূরদৃষ্টি। আগামী ১০ বছর পর যুগের অবস্থা কেমন হবে, ভোক্তার কী কী দরকার হতে পারে, সেগুলো আবিষ্কার করাই দক্ষ ব্যবসায়ীর কাজ।

আর সর্বশেষ যেটা বলব, তা হলো কাজে ধারবাহিকতা বজায় রাখা। ছোট ছোট কাজও যখন ধারাবাহিকভাবে করা হয়, সেটার ফলাফল অনেক বড় আকার ধারণ করে সামনে আসে। গ্রাহক চাওয়া মাত্র যেন আপনার সেবা পায়, সে জন্য ধারাবাহিকতা অত্যন্ত জরুরি। মাঝেমধ্যেই যদি আপনি হাওয়া হয়ে যান, তাহলে আপনার উপরোক্ত সব গুণ থাকার পরও সফলতার নিশ্চয়তা দেওয়া কঠিন। ‘ছোট ছোট বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল। ’ তাই বালুকণাগুলো ধৈর্যের সঙ্গে সংগ্রহ করতে হবে। স্বপ্নবাজরা ভিন্ন কোনো কাজ করে না, একই কাজ ভিন্ন আঙ্গিকে করে। ভিন্নভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলেই সাফল্যের কাঠি ছোঁয়া যায়।